স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুতর ঘুমজনিত রোগ, যেখানে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ: স্লিপ অ্যাপনিয়া ধরা পড়লে কি অবশ্যই থেরাপি নিতে হবে?
উত্তর হলো— সবসময় নয়, তবে রোগের মাত্রা (Severity) অনুযায়ী থেরাপির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিতভাবে বাড়তে থাকে। রোগের তীব্রতা এবং উপসর্গের প্রভাব বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন।
আপনি কি এটি পড়েছেন?
ঘুমের সমস্যা: কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা →স্লিপ অ্যাপনিয়া কী এবং এর প্রকারভেদ
স্লিপ অ্যাপনিয়া সাধারণত দুটি প্রধান ধরনের হয়ে থাকে:
- অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea – OSA): এটি সবচেয়ে সাধারণ। এ ক্ষেত্রে গলার পেশি শিথিল হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাসনালী আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়।
- সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (Central Sleep Apnea – CSA): এটি বিরল। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে শ্বাস নেওয়ার সংকেত দিতে ব্যর্থ হয়।
কখন থেরাপি অপরিহার্য? (Therapy Necessity)
রোগীর অবস্থা তিন ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়:
আপনি কি এটি পড়েছেন?
স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অনিদ্রার চিকিৎসা: Overnight Polysomnography এর সম্পূর্ণ গাইড →১. হালকা স্লিপ অ্যাপনিয়া (Mild OSA)
যদি স্লিপ অ্যাপনিয়ার মাত্রা হালকা হয় এবং উপসর্গগুলো দৈনন্দিন জীবনে গুরুতর প্রভাব না ফেলে, তবে থেরাপির বদলে জীবনযাত্রার পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- ওজন কমানো: গলার চারপাশের অতিরিক্ত মেদ শ্বাসনালীর ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- পাশ ফিরে ঘুমানো: চিৎ হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করা।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন: এগুলো গলার পেশি শিথিল করে সমস্যা বাড়ায়।
এই ক্ষেত্রে সাধারণত নিবিড় পর্যবেক্ষণ বা ফলো-আপের পরামর্শ দেওয়া হয়।
আপনি কি এটি পড়েছেন?
মাল্টিপল স্লিপ ল্যাটেন্সি টেস্ট (MSLT): ঘুমজনিত ব্যাধি সনাক্ত করার আধুনিক পরীক্ষা →২. মাঝারি থেকে তীব্র স্লিপ অ্যাপনিয়া (Moderate–Severe OSA) ⚙️
যখন স্লিপ অ্যাপনিয়ার মাত্রা মাঝারি বা গুরুতর হয় (Moderate to Severe), অথবা হালকা হলেও উপসর্গগুলো (যেমন: দিনে অতিরিক্ত ঘুম, মনোযোগের অভাব) দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে, তখন থেরাপি নেওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি: CPAP
মাঝারি ও তীব্র স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর চিকিৎসা হলো CPAP (Continuous Positive Airway Pressure) থেরাপি।
এই যন্ত্রটি ঘুমের সময় একটি মাস্কের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে ক্রমাগত মৃদু চাপ বজায় রাখে, ফলে শ্বাসনালী বন্ধ হতে পারে না। CPAP ব্যবহারে নাক ডাকা এবং অক্সিজেনের ঘাটতি বন্ধ হয়।
| থেরাপির বিকল্পসমূহ | কাদের জন্য উপযোগী |
|---|---|
| CPAP | মাঝারি থেকে গুরুতর OSA-তে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর জন্য। |
| Oral Appliance Therapy (OAT) | হালকা থেকে মাঝারি OSA-এর জন্য, বা যারা CPAP সহ্য করতে পারেন না। |
| Surgery | যদি শ্বাসনালীর নির্দিষ্ট গঠনগত সমস্যা থাকে। |
❤️ থেরাপি না নিলে ঝুঁকি (Risks of Untreated Sleep Apnea)
চিকিৎসা না করালে স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি নীরব ঘাতক হয়ে উঠতে পারে। অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শরীরে নিম্নলিখিত জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে:
- হৃদরোগ ও স্ট্রোক: দীর্ঘস্থায়ী অক্সিজেনের অভাবে হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিস: এটি শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
- কর্মক্ষমতা হ্রাস: দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম, মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন দেখা দেয়।
✅ থেরাপি দিতে হবে কিনা
স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে থেরাপি দিতে হবে কিনা, এই সিদ্ধান্তটি চিকিৎসকের নির্ণয় এবং রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। হালকা ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তনই যথেষ্ট হলেও, মাঝারি বা গুরুতর ক্ষেত্রে CPAP বা অন্য কোনো থেরাপি গ্রহণ করা শুধু আরামদায়ক নয়, বরং জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। তাই রোগ নির্ণয় হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।